ভূমিকা : বইয়ের মতো বড় বন্ধু আর নেই। বই কিনে কেউ কখনও দেউলে হয় না। অথচ বই কেনার রেওয়াজ আজও আমাদের এখানে তেমনভাবে চালু হয়নি। এর পেছনে কারণও আছে যথেষ্ট। ছাত্রজীবনে বইয়ের সঙ্গে যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে পরবর্তী কালে কর্মজীবনে এসে তা অনেকটা আলগা হয়ে যায় । বলতে গেলে এভাবে অলক্ষ্যেই একজন পাঠকের মৃত্যু ঘটে। বইয়ের সঙ্গে পাঠকের এই যোগাযোগহীনতার কারণে পাঠকের মেধা ও মননের বিকাশ ঘটে না। বই মানুষের চেতনা ও শক্তিকে জাগ্রত করে, আলোকিত করে বই মেলা পাঠকের নাগালের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের নতুন নতুন বই পৌঁছে দিয়ে জ্ঞানের প্রবাহকে সচল রাখে।
বই মেলার সূচনা : ১৪৬২ খ্রিস্টাব্দে বই মেলার সূচনা হয় জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে। লিপজিগ হচ্ছে বই মেলার প্রাচীনতম স্থান। ফ্রাংকফুর্টে বসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা। বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরে এখন নিয়মিতভাবে বই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের দেশে কলকাতা সহ প্রায় শহরে বইমেলার ভিড় দেখা যায়। এছাড়া প্রকাশনা সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দেশের আনাচে কানাচে বইমেলা আয়োজন অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
বই মেলার আয়োজন : বড় ধরনের বই মেলার জন্য খোলা ময়দানই উপযুক্ত জায়গা। এখানে প্যাভিলিয়ন, স্টল, রেস্তোরাঁ,শিশু কর্নার, লেখককুঞ্জ, সেমিনারসহ আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ছোট পরিসরের মেলাগুলোবেশিরভাগই হয়ে থাকে অভ্যন্তরীণ পরিবেশে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নতুন বইয়ের সম্ভার নিয়ে স্টল খোলে বইমেলায়। এক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রবণতা থাকে বিশেষ ধরনের বই প্রকাশের। ফলে ক্রেতারা তাদের অভিরুচি ও প্রয়োজন অনুযায়ী বই কিনতে পারেন।
বইমেলা ও পাঠক : বইমেলার মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ হয় বলে প্রকাশক ও ক্রেতার মধ্যে একটা যোগসুত্র তৈরি হয় ।বইমেলা হয়ে ওঠে লেখক, প্রকাশক, শিল্পী ও পাঠকের মিলন-মেলা। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও মত বিনিময়ের ফলেতাদের ভেতর সৌহার্দ্য সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। মেলায় ঘুরে ঘুরে বই কেনা, আড্ডা, বিতর্ক, আলোচনা, গান-বাজনা, আবৃত্তি -সব মিলিয়ে একটা আনন্দময় পরিবেশ তৈরি হয়। অনেক সময় টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করতে হয় বলে অবাঞ্চিতলোকদের ভিড় কম থাকে । তাছাড়া মেলায় বিশেষ কমিশনে বই বিক্রি হয় বলে পাঠক নতুন বই কিনতে আগ্রহ বোধ করেন।
উপসংহার : বই মেলার বড় বৈশিষ্ট্য হল পাঠক মেলায় এসে হরেক রকম নতুন বই দেখার সুযোগ পান। এর ফলে তাদেরপাঠ স্পৃহার পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় কৌতূহল বৃদ্ধি পায়। এভাবে সাধারণ জনগণকে বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করারসঙ্গে সঙ্গে বইয়ের জগতে এক ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে বই মেলা। এর সুফল লেখক, প্রকাশক, পাঠক – সবাই সমানভাবে ভোগ করছেন।